ব্লোয়ারতো অনেকেই দেখেছেন। এটার কাজ হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ বাতাসকে উচ্চ গতিতে একটি নির্দিষ্ট দিকে ঠেলে দেয়া। ব্লোয়ারের এই অংশ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে এবং এই অংশ দিয়ে বের হয়। ব্লোয়ারের মতই একই কাজ করে এক্সস্ট ফ্যান যা রুমের বাতাসকে বাইরে ঠেলে দেয়। এখন ব্লোয়ার কিংবা এক্স ফ্যান যেই কাজ করে জেট ইঞ্জিন জাস্ট একই কাজ করে বাতাসকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঠেলে দেয়। তবে সেটা হয় বড় স্কেলে যেমনঃ এখানে ব্লোয়ার থেকে যে পরিমাণ বাতাস বের হচ্ছে তা হয়তো আমি ম্যানেজ করতে পারছি কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ বাতাস যদি বের হতো তবে কি আমি ম্যানেজ করতে পারতাম?
উত্তর হচ্ছে না, বাতাস বের হওয়ার ফোর্সের কারণে আমি পেছনে চলে যেতাম। জেট ইঞ্জিনের কারণে প্লেনে জাস্ট এই একই ঘটনা ঘটে জেট ইঞ্জিন থেকে বের হওয়া বাতাসের ফলে সৃষ্ট ফোর্স প্লেন ম্যানেজ করতে পারে না ফলাফল প্লেন সামনে এগিয়ে যায়। জেট ইঞ্জিন সম্পৃক্ত এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের ভিডিও, আমি জুম্মান আছি আপনাদের সাথে আপনারা দেখছেন Bigganpic । পাখি বাতাসকে ঠেলে দিয়ে উপরে ওঠে, মানুষ বাতাসকে ঠেলে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং করে যা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগে। এখন বাতাসকে ঠেলে দেয়ার এই ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে জেড ইঞ্জিন যা মানুষের জীবনে অভাবনীয় গতি এনে দিয়েছে। বর্তমান
সময়ের গাড়িতে যে পিস্টন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় অতীতে কিন্তু এই পিস্টন ইঞ্জিন দিয়েই প্লেন উড়ানো হতো। প্লেনে থাকা পিস্টন ইঞ্জিনের মাধ্যমে প্লেনের সামনে থাকা পাখা ঘোরানো হতো। এর ফলে ব্লোয়ারের মত প্লেনের দিকে বাতাসের প্রবাহ তৈরি হতো এতে প্লেন সামনে এগিয়ে যেত। কিন্তু প্লেনে পিস্টন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এটি ইঞ্জিনের ওজনের বিপরীতে কম শক্তি উৎপন্ন করে অর্থাৎ ওয়েট টু পাওয়ার রেশিও কম ছিল। পিস্টন ইঞ্জিনে প্রচুর মুভিং পার্টস থাকাতে এতে বেশি নয়েজ এবং ভাইব্রেশন তৈরি হতো। পিস্টন ইঞ্জিন প্লেনের গতি ঘন্টায় 200 থেকে 350 কিলোমিটার এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং সর্বোপরি পিস্টন ইঞ্জিন কতটা শক্তিশালী হতে
পারবে এর একটি সীমাবদ্ধতা ছিল। সময়টা 1920 দশক ফ্র্যাঙ্ক উইটলি তখন ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সে কর্মরত। তিনি লক্ষ্য করেন, পিস্টন ইঞ্জিন প্লেন যখন উপরে যায় তখন পাতলা বায়ুমন্ডলে প্লেনের পারফরমেন্স ড্রপ করে কারণ তখন ইঞ্জিন যথেষ্ট অক্সিজেন পায় না। সেই সাথে প্রোপেলার বাতাস পেছনে ঠেলে দেয়ার জন্য প্রোপেলারের আশপাশে যথেষ্ট বাতাসের ঘনত্ব থাকে না। তখন ফ্র্যাঙ্ক উইটলি নতুন ধরনের প্লেন ইঞ্জিন অর্থাৎ জেট ইঞ্জিন নিয়ে ভাবতে থাকেন এবং 1932 সালে জেট ইঞ্জিনের পেটেন্টস জমা দেন। যদিও জেট ইঞ্জিনের ধারণা বা কনসেপ্ট বহু আগে থেকেই ছিল। খ্রিস্টের 120 বছর আগে হিরো অফ আলেকজান্ড্রিয়া প্রথম জেট প্রপালশন বা বায়ুপ্রবাহের ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন। তার
ইঞ্জিনটি ছিল গোলক সাইজের যাতে লিকুইড যেমন পানি ভর্তি করা হয় এবং গোলকের বাইরে দুইটি চিকন পাইপ যুক্ত ছিল। এমন অবস্থায় গোলকটিকে উত্তপ্ত করা হলে গোলকের ভেতরে থাকা লিকুইড বাষ্পে পরিণত হয় এবং দুইটি চিকন পাইপ দিয়ে বের হয়ে আসে। এখন পাইপ দিয়ে বাষ্প উচ্চগতিতে বা জেটের মত বের হবার ফলে গোলকটি ঘুরতে শুরু করতো। থিওরিটেকেলি এটিই হচ্ছে প্রথম জেট ইঞ্জিন, এর 1600 বছর পর আইজিক নিউটন এই জেট ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে এর সূত্র দেন যা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র নামে পরিচিত এবং সেটি হচ্ছে প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকবে। এরপর জেমস ওয়ার্ড কেটলির পানি ফোটার
সময় কেটলির ঢাকনা সরে যাওয়া দেখে আবিষ্কার করেন স্ট্রিম ইঞ্জিন অর্থাৎ বাষ্প ইঞ্জিন। বিষয়টি কিন্তু খুবই সিম্পল কেটলির বাষ্প যখন তার সুর মুখ দিয়ে বের হয় তখন এতে একটি পাখা বা টারবাইন রাখলে সেটি ঘুরতে শুরু করে এবং এটি হচ্ছে বাষ্প ইঞ্জিন যাই হোক ফ্র্যাঙ্ক উইটলির প্রপোজ করা জেট ইঞ্জিন ছিল বাষ্প ইঞ্জিনের টারবাইনের মতো যেখানে একটি সিঙ্গেল মুভিং পার্ট থাকবে যার সামনে এবং পেছনে টারবাইন বসানো থাকবে দুই টারবাইনের মাঝখান থেকে উচ্চগতির বাষ্প পেছনের টারবাইন কে ক্রস করার সময় টারবাইনটিকে ঘোরাবে এখন পেছনের টারবাইনের সাথে যেহেতু সামনের টারবাইন যুক্ত থাকবে ফলে পেছনের টারবাইন ঘোরার ফলে সামনের টারবাইনও ঘুরবে ফলাফল
সামনের টারবাইন প্রচুর পরিমাণ বাতাস শুষে নিয়ে পেছনের টারবাইনে ঠেলে দিবে অনেকটা ব্লোয়ারের মত ফ্র্যাঙ্ক উইডলি প্রস্তাব করেন জেট ইঞ্জিনে উচ্চগতির জেট বা বায়ু প্রবাহ তৈরি হবে যা প্লেনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রাথমিকভাবে ফ্র্যাঙ্ক উইডলির প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি কারণ জেট ইঞ্জিনের যে মডেল দেয়া হয়েছে তাতে গ্যাসের দহনের ফলে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হবে যা সহ্য করার মত মেটাল ওই সময় ছিল না তাছাড়া জেট ইঞ্জিন কে তখন শুধুমাত্র থিওরিটিক্যালি পসিবল বলে মনে করা হতো প্রাথমিকভাবে জেট ইঞ্জিনের ধারণা গুরুত্ব না পেলেও জেট ইঞ্জিন প্রস্তাবের মাত্র এক দশকের মধ্যেই সফলভাবে কার্যকর জেট ইঞ্জিন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়
এখন জেট ইঞ্জিন মূলত কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বলা যাক একটি বেলুনে বাতাস ভরে তারপর সেটি ছেড়ে দিলে কি ঘটে বেলুন এলোমেলো ভাবে চারদিকে ছুটতে থাকে তবে এতে কিছু মেকানিজম করলে বেলুন নির্দিষ্ট পথে চলতে থাকে এখানে মূলত বেলুনের ছিদ্র দিয়ে উচ্চগতিতে বাতাস বের হবার ফলে যে ক্রিয়া তৈরি হচ্ছে সেই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেলুন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে জেট ইঞ্জিন জাস্ট এই কাজটি করে জেট ইঞ্জিনের পেছনের এই নজেল দিয়ে উচ্চগতিতে বাতাস নির্গত হয় যার ফলে প্লেন সামনে এগিয়ে যায় এখন প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্চগতির জেট পেতে জেট ইঞ্জিনে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং করার প্রয়োজন হয়েছে যার শুরু দুই প্রান্তে টারবাইন বা
ব্লেড যুক্ত একটি দন্ড দিয়ে জেট ইঞ্জিন মূলত চারটি অংশে বিভক্ত কম্প্রেসার কম্বাস্টন চেম্বার টারবাইন এক্সোস নজেল কম্প্রেসারের কাজ হচ্ছে বাতাস শুষে নেয়া অর্থাৎ কম্প্রেসারে থাকা পাখাগুলো যখন ঘোরে তখন তার সামনের বাতাসকে শুষে নেয় অনেকটা এক্সট ফ্যান যেমন রুমের বাতাস শুষে নিয়ে বাইরে ঠেলে দেয় ঠিক সেরকম কম্প্রেসারে থাকা ব্লেডগুলো বাতাস শুষে নেয়ার পাশাপাশি বাতাসকে সংকুচিত করে এবং এর জন্য ব্লেডগুলো কিভাবে তৈরি করতে হবে তার বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে কম্প্রেসারে দুই ধরনের ব্লেড থাকে যাদের একটি অংশ ঘোরে এবং অন্য অংশটি স্থির থাকে কম্প্রেসারের মাধ্যমে সংকুচিত বাতাস কম্বাস্টন চেম্বারে আসার পর এখানে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় যা বাতাসের অক্সিজেনের
সংস্পর্শে দহন বিক্রিয়া ঘটায় এতে প্রচুর পরিমাণ উত্তপ্ত বায়বীয় গ্যাস তৈরি হয় অর্থাৎ যতটা পরিমাণ গ্যাসীয় বস্তু কম্বাস্টন চেম্বারে প্রবেশ করেছিল তা দহনের ফলে উচ্চতাপের প্রসারিত বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয় কম্বাস্টন চেম্বারের বায়বীয় পদার্থ উচ্চগতিতে টারবাইনে প্রবেশ করে এখন উচ্চগতির বায়বীয় গ্যাস যখন টারবাইনে প্রবেশ করে তখন স্ট্রিম ইঞ্জিনের মত টারবাইন ঘুরতে শুরু করে এখন পেছনের এই টারবাইন যেহেতু সামনে থাকা পাখার সাথে সংযুক্ত থাকে ফলে পেছনের টারবাইনের সমান গতিতে সামনের পাখা ঘুরতে শুরু করে টারবাইন থেকে উচ্চগতির বায়ুবীয় গ্যাস নজেল দিয়ে বের হয় যার প্রতিক্রিয়ায় প্লেন সামনে এগিয়ে যায় অনেকটা বেলুনের ছিদ্র দিয়ে বাতাস বের হবার মতো এই হচ্ছে
জেট ইঞ্জিন যার থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট খুবই সিম্পল তবে একটি কার্যকর জেট ইঞ্জিন তৈরি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ থাকে একটি জেট ইঞ্জিন কতটা শক্তিশালী হবে এটা নির্ভর করে নজেল দিয়ে কতটা উচ্চ গতিতে বায়বীয় পদার্থ বের হচ্ছে তার উপর অর্থাৎ কতটা থ্রাস্ট তৈরি হচ্ছে তার উপর থ্রাস্ট কে আমরা এই সিম্পল ইকুয়েশন এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি এই সমীকরণে এম হচ্ছে কতটা বাতাস ইঞ্জিনে প্রবেশ করছে তার পরিমাণ এবং এ হচ্ছে বাতাস ইঞ্জিনে প্রবেশ করার পর কতটা স্পিডে নজেল দিয়ে বের হচ্ছে তার পরিমাণ এখন এই দুটি ফ্যাক্টর যতটা বাড়ানো যাবে জেট ইঞ্জিন ততটাই পাওয়ারফুল হবে প্রথম দিকের জেট ইঞ্জিন
সিম্পল ফরমেটের হলেও বর্তমানের জেট ইঞ্জিনে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে এম এবং এ এর মান বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমান জেট ইঞ্জিনে বাতাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য কম্প্রেসারে বিশাল ফ্যান রাখা হয়েছে কম্প্রেসারে থাকা ব্লেডগুলো যেন বাতাসকে বেশি কমপ্রেস করতে পারে এর জন্য ব্লেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে ইঞ্জিনে বাইপাস সিস্টেম রাখা হয়েছে কম্বাস্টন চেম্বারকে কয়েকটি অংশে ভাগ করার বিপরীতে একটি কাঠামোতে পরিণত করা হয়েছে আগের জেট ইঞ্জিনে সামনের এবং পেছনের টারবাইন সমান স্পিডে ঘুরতো কারণ তারা একটি কাঠামোতে সংযুক্ত ছিল তবে বর্তমানে বিষয়টিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে দুইটি আলাদা কাঠামোর মাধ্যমে সামনের এবং পেছনের টারবাইন সংযুক্ত করা হয়েছে ফলে সকল ব্লেড সেম স্পিডে
না ঘুরে প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুরে সেই সাথে একই দিকের পরিবর্তে বিপরীত দিকেও ঘুরতে পারে এসবের বাইরেও আরো অনেক খুঁটিনাটি ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে তবে সেই সকল বিষয় না গিয়ে বর্তমান জেট ইঞ্জিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা যাক বর্তমানে প্লেনে ব্যবহার করা জেট ইঞ্জিন গুলো মূলত হচ্ছে টার্বো ফ্যান জেট ইঞ্জিন যেখানে জেট ইঞ্জিনের সামনে একটি বিশাল সাইজের ফ্যান সংযুক্ত থাকে এর কারণ হচ্ছে এয়ার বাইপাস করা এক্ষেত্রে যতটা বাতাস ইঞ্জিন শুষে নেয় এর বড় একটি অংশ মূল ইঞ্জিনে প্রবেশ না করে ইঞ্জিনের বাইরের অংশ দিয়ে বাইপাস হয়ে নজেল দিয়ে বের হয়ে যায় এখন কতটা বাতাস মূল ইঞ্জিনে প্রবেশ করছে এবং কতটা
বাতাস বাইপাস হচ্ছে একে বলা হয় বাইপাস রেশিও এই বাইপাস রেশিও যত বেশি হবে জেট ইঞ্জিন তত বেশি ইফেক্টিভ হবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কিভাবে এ বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবেন এই সমীকরণের মাধ্যমে মূল ইঞ্জিনে যে বাতাস প্রবেশ করে তা কম্বাস্টন চেম্বারে ফুয়েলের সাথে সংযুক্ত হয়ে প্রসারিত হয় এবং নজেল দিয়ে বের হবার সময় এর মান বৃদ্ধি করে অন্যদিকে বাইপাস এয়ার অর্থাৎ ইঞ্জিনের সামনে থাকা বিশাল ফ্যান যে পরিমাণ বাতাস শুষে নেয় তার বড় একটি অংশ জ্বালানি সংস্পর্শে না আসলেও বাইপাস হয়ে নজেল দিয়ে যেহেতু বের হচ্ছে যার সমীকরণের এম এবং এ এর মান বৃদ্ধি করে যার ফলে থ্রাস্টের পরিমাণও
বৃদ্ধি পায় বর্তমানের আধুনিক জেট ইঞ্জিনের মোট থ্রাস্টের প্রায় 80% থ্রাস্ট আসে বাইপাস এয়ার থেকে এবং এই বাইপাস এয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত জেট ইঞ্জিনের সামনে থাকা ফ্যানের সাইজ বৃদ্ধি করা হচ্ছে যার ফলে জেট ইঞ্জিনের সাইজও ক্রমাগত বাড়ছে তবে জেট ইঞ্জিনের সামনে থাকা ফ্যানের সাইজ কত কতটা বড় করা যাবে এর একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রথমত ইঞ্জিনের সাইজ বেশি বড় হলে তা মাটির সাথে লেগে যাবে দ্বিতীয়ত ফ্যানের কেন্দ্রবিমুখী বল একটি বৃত্তাকার কাঠামো যখন ঘোরে তখন কাঠামোর কেন্দ্রের কাছের এবং দূরের অংশে কৌণিক গতি সেম থাকলেও রৈখিক গতি সেম থাকে না অর্থাৎ সেন্টার থেকে যত দূরে যাওয়া হবে রৈখিক গতি
ততই বেশি হবে যার ফলে সেখানে কেন্দ্রবিমুখী বলের পরিমাণও বেশি হবে যা আপনি এই সমীকরণের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন এখানে এম হচ্ছে ম্যাস ওমেগা হচ্ছে অ্যাঙ্গুলার ভেলোসিটি এবং আর হচ্ছে রেডিয়াস এখানে আর যত বাড়বে কেন্দ্রবিমুখী বল ততই বাড়বে এখন আর এর মান বাড়িয়ে আমরা যদি আবার এম কমাতে পারি তাহলে কিন্তু কেন্দ্রবিমুখী বল কমানো সম্ভব এবং এইজন্য বর্তমানে যতটা সম্ভব হালকা মেটেরিয়াল দিয়ে শক্তিশালী পাখা তৈরি করা হয় এবং এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় কার্বন ফাইবার যেখানে আগে ব্যবহার করা হতো টাইটেনিয়াম এখন চাইলেই যেকোনো হালকা মেটেরিয়াল ব্যবহার করা সম্ভব নয় কারণ এখানে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখার প্রয়োজন রয়েছে যেমন
প্লেন যখন আকাশে উড়বে তখন পাখির মত প্রাণী হিট করতে পারে এখন কোন একটি পাখি যদি জেট ইঞ্জিনে চলে আসে তখন সেই পাখিটির আঘাত ফ্যানের ব্লেডগুলো সহ্য করতে পারবে কিনা সেটাও যাচাই করার বিষয় রয়েছে এবং এজন্যই যখন কোন নতুন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফ্যান তৈরি করা হয় তখন সেটিতে চিকেন গান টেস্ট করা হয় অর্থাৎ ফ্যানটিকে হাই স্পিডে ঘোরানো অবস্থায় মুরগি ছুড়ে দেয়া হয় এর ফলে যদি পাখাটি ঠিক থাকে তখনই সেই ম্যাটেরিয়াল ব্যবহারের উপযোগী বলে গণ্য হয় এটি তো একটি সাধারণ টেস্টের কথা বললাম এর বাইরেও আরো বিভিন্ন ধরনের টেস্ট রয়েছে যাই হোক জেট ইঞ্জিনের সামনের ফ্যান বেশি বড় করলে
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ফ্যানের শেষ প্রান্তের স্পিড সব দীর্ঘ গতিকে অতিক্রম করবে যা সক ওয়েবসহ যন্ত্রাংশের ক্ষতিসাধন করবে এবং এজন্য সামনের ফ্যানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এখন সামনের ফ্যান যেহেতু পিছনের টারবাইনের সাথে সংযুক্ত থাকে যার ফলে টারবাইন যত স্পিডে ঘুরবে সামনের ফ্যানও সেম স্পিডে ঘুরবে এখন এমন অবস্থায় সামনের ফ্যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গিয়ার ব্যবহার করা হয় এবং এই গিয়ারের মাধ্যমে পেছনের টারবাইন এবং সামনের ফ্যানের গতির মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আসা হয় অর্থাৎ সামনের ফ্যানের গতি কিছুটা কমিয়ে রাখা হয় এভাবে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সামনের ফ্যানের গতি পারফেক্ট রাখা হয় সেই সাথে বাইপাস এয়ারের পরিমাণ সর্বোচ্চ করার
চেষ্টা করা হয় যেন একটি জেট ইঞ্জিন সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখাতে পারে বর্তমান সময়ে কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেনে ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় জেট ইঞ্জিন হচ্ছে জি নাইন এক্স যার ব্যাস 34 মিটার বা 115 ফুট এই ইঞ্জিনের বাইপাস রেশিও হচ্ছে 101:1 অর্থাৎ এক কেজি বাতাস যদি মূল ইঞ্জিনে প্রবেশ করে তবে 101 কেজি বাতাস বাতাস ইঞ্জিনে প্রবেশ না করেই বাইপাস হয়ে বের হবে এই ইঞ্জিন প্রতি সেকেন্ডে 1550 কেজি বাতাস শোষণ করে থ্রাস্ট তৈরি করে আবারো বলছি প্রতি সেকেন্ডে 1550 কেজি বাতাস তাহলে বুঝতেই পারছেন কি পরিমাণ বাতাস এই ইঞ্জিন শোষণ করে জেট ইঞ্জিনের পেছনের টারবাইন ঘুরলে এর মাধ্যমে সামনের পাখা ঘোরে এখন প্রশ্ন
হচ্ছে পেছনের টারবাইন ঘোরার জন্য তো সামনের পাখা প্রথমে ঘুরতে হবে এমন ক্ষেত্রে জেট ইঞ্জিন স্টার্ট হয় কিভাবে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন মোটরসাইকেল চালু করতে কিন্তু প্রথমে কিক মারতে হয় আবার ইলেকট্রিক জেনারেটর চালু করতে বাইরে থেকে প্রথমে এনার্জি দিতে হয় ঠিক একইভাবে জেট ইঞ্জিনও চালু করতে প্রথমে বাইরে থেকে এনার্জি দিয়ে সামনের পাখাকে ঘোরাতে হয় এবং এজন্য প্লেনের পেছনে পাওয়ার সোর্স থাকে যাকে বলা হয় এপিও বা অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট এই পাওয়ার ইউনিটের মাধ্যমে সামনের ফ্যানকে ঘোরানো হয় এবং এর মাধ্যমে জেট ইঞ্জিন স্টার্ট হয় প্রথমে একপাশের ইঞ্জিন চালু করা হয় এবং এর পর অপর পাশের ইঞ্জিন চালু করা
হয় আগের দিনের পিস্টন ইঞ্জিন প্লেন চালু করার ক্ষেত্রেও কিন্তু প্রথমে হাত দিয়ে পাখা ঘুরিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করতে হতো এখন প্রশ্ন হচ্ছে জেট ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট থ্রাস্ট প্লেনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু প্লেন বাতাসে ওড়ে কিভাবে এ বিষয়টি বোঝার জন্য খুবই সিম্পল একটি উদাহরণ দেয়া যাক উচ্চগতির ট্রেন কিংবা কারের জানালা দিয়ে হাত বের করলে হাত প্রচন্ড বাতাস অনুভব করে এমন ক্ষেত্রে হাতের সামনের অংশকে যদি আপনি হালকা উপরের দিক করেন তবে পূর্ণ হাত উপরে উঠে যাবার জন্য ফোর্স অনুভব করে আবার হাতের সামনের অংশ যদি হালকা নিচের দিকে করেন তবে সম্পূর্ণ হাত নিচে যাবার জন্য ফোর্স অনুভব করে
ঠিক এই একইভাবে প্লেন আকাশে ওড়ে জেট ইঞ্জিনের জন্য প্লেন প্রচন্ড গতিতে ছুটতে থাকে ওই অবস্থায় প্লেনের দুই পাশে থাকা পাখার অবস্থান উপরে নিচে করেই প্লেনকে উপরে নেয়া হয় আবার নিচে আনা হয় এর বাইরে প্লেনের ডানে বামে যাওয়া দুই পাশে ভারসাম্য রক্ষা উপর নিচ হওয়া এই বিষয়গুলোর জন্য মূল পাখার আগে পেছনে ছোট ছোট পাখা থাকে সেই সাথে পেছনে পাখা থাকে এসবের বাইরে প্লেন ওড়ার পেছনের মূল ফিজিক্স কেমন সে সম্পর্কে আমার একটি বিস্তারিত ভিডিও রয়েছে লিংক ডেসক্রিপশন বক্সে দেয়া থাকবে ফ্র্যাঙ্ক উইটলি যখন প্রিস্টনি ইজিনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ভাবছিলেন তখন তিনি বুঝতে পারেন প্লেন যত উপর দিয়ে চলাচল করবে
ততই কম জ্বালানি খরচ করবে কারণ উপরে বাতাসের ঘনত্ব কম থাকে যার ফলে প্লেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় বাতাসের বাধা কম থাকবে বর্তমানের কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট গুলো ভূমি থেকে প্রায় 40000 ফিট বা 12 কিলোমিটার উপর দিয়ে করে যা সম্ভব হয়েছে জেট ইঞ্জিনের কারণে প্লেন এবং জেট ইঞ্জিনে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে যা খুঁটিনাটি বলতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন তবে সেদিকে না গিয়ে জেট ইঞ্জিনের সামনে কেন এই স্পাইরাল শেপের পেইন্ট থাকে তা বলে ভিডিও শেষ করা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই প্লেনের সামনে স্পাইরাল পেইন্ট ব্যবহার হয়ে আসছে এর মূল কারণ হচ্ছে গ্রাউন্ড স্টাফের সেফটি জেট ইঞ্জিন যখন স্টার্ট হয় তখন এটি
খুবই বিপদজনক হয়ে ওঠে কারণ এটি তার সামনের বাতাস শুষে নেয় যেমন বোইং 737 এর ইঞ্জিন যখন সাধারণভাবে সক্রিয় থাকে তখন এর সামনে এবং দুই পাশে 9 ft এবং পূর্ণভাবে সক্রিয় থাকার সময় 14 ফিট স্থান খুবই বিপদজনক অর্থাৎ এই সীমার মধ্যে যদি মানুষ কিংবা অন্য কোন অবজেক্ট আসে সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন ওই ব্যক্তি কিংবা অবজেক্টকে শুষে নিবে যা খুবই মারাত্মক দুর্ঘটনা তৈরি করবে এখন এমন ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য ইঞ্জিনের সামনে স্পাইরাল শেপের পেইন্ট থাকে যা ঘুরতে থাকলে বোঝা যায় যে ইঞ্জিন সক্রিয় রয়েছে ব্যস্ত এয়ারপোর্টে প্রতিনিয়ত প্লেন ওঠানামা করে এখনই ব্যস্ততার মধ্যে কেউ যেন ইঞ্জিনের বিপদ সীমার মধ্যে
প্রবেশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে পারেন সেজন্যই এই পেইন্টের ব্যবহার এর বাইরে ইঞ্জিনের কাছে যেন পাখি না আসে সেক্ষেত্রেও নাকি এই স্পাইরাল কাজ করে যাই হোক ইঞ্জিনের সামনের পেইন্ট যে শুধু স্পাইরাল শেপের হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স বিভিন্ন শেপ ব্যবহার করতে পারে আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে বিশাল এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ সরল ভাবে দেয়া সম্ভব নয় তবে কিছু বিষয়কে ফোকাস করে এর উত্তর খোঁজা যেতে পারে এখন মহাবিশ্বের কেন্দ্র সম্পৃক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন