[মিউজিক] আন্তর্জাতিক নদী হলেও কয়েক দশক ধরে তিস্তা নিয়ে একক আধিপত্য দেখাচ্ছে ভারত বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তিস্তার পানির ন্যাজ্য হিসা আদায়ে যুগ যুগ ধরে হাহাকার করলেও শুনছে না ভারত এমন দুর্দশার মধ্যে তিস্তা প্রকল্পে চীন আগ্রহ দেখালে ভারতের বিরূপ মনোভাবের কারণে তা ঝুলে যায় কারণ ভারতের ধারণা বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলতে পারে চীন এতে করে হুমকির মুখে পড়বে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা সেভেন সিস্টারস কেন তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীনের হস্তক্ষেপে কতটা ভীত প্রতিবেশী এদেশ তাই জানাবো এবারের সারমর্মে সঙ্গে ওমর ফারুক হিম পর্বতের বরফ গলা
পানি তিস্তা নদীর প্রধান উৎস ভারতের উত্তর সিকিমের গুরুডং লেক ও সোলাম লেক থেকে তিস্তার অস্তিত্ব শুরু পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে পানি প্রবাহ দার্জিলিং এর সমভূমিতে নেমে আসে পরে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি হয়ে নদীটি নীলফামারি কালিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এরপর রংপুর কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা হয়ে নদী মিলিত হয় ব্রহ্মপুত্র নদে 315 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে তিস্তা নদী বাংলাদেশ অংশে পড়েছে 115 [মিউজিক] কিলোমিটার কৃষি ক্ষেত্রে তিস্তার পানি দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সোনায় সোহাগা হলেও ভাটি অঞ্চল বাংলাদেশে শুরু হয় হাহাকার শুষ্ক মৌসুমে যখন পানি প্রয়োজন তখনই আটকে দেয় ভারত এতে উত্তর জনপদের জমি মরুভূমির মত ধুধু বালুচরে পরিণত হয় ওয়াশিংটন ভিত্তিক
একটি আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা সংস্থার সূত্রে জানা যায় পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর 15 লাখ টন কম বড় ধান উৎপাদন হয় যা কিনা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ধানের 9 শতাংশ যা অংকে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় 6000 কোটি টাকা আর বর্ষা মৌসুমে ভারতের উজানে গজল ডোবা বাঁধ খুলে দিলে তলিয়ে যায় গাইবান্ধা রংপুর কুড়িগ্রাম সহ উত্তরের পাঁচ জেলা এতে আবারো ক্ষতির মুখে পড়ে ফসল জমি অবাধী পশু ও ঘরবাড়ি তখন আবারো শুরু হয় লক্ষাধিক মানুষের আর্তনাদ ভুট্টা গম ও কাঁচামরিচ সহ ফসলের ক্ষেত তলিয়ে প্রায় 30000 কোটি টাকার ফসল ক্ষতির মুখে পড়ে তবে অপরদিকে ভারত 35 টিরও বেশি বাঁধের মাধ্যমে তিস্তার পানি নিজেরা
কুক্ষিগত করে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি কাজে ব্যবহার করছে শুধু কি কৃষি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করছে তিস্তার পানি সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে পাঁচ জেলায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে আরো 15 টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে অবাক করার বিষয় আরো 27 টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিকল্পনাধীন রয়েছে [মিউজিক] ভারতের 1979 সালে গজল ডোবা বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণে নেয় ভারত তবে পানি বন্টনে 1983 সালে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিস্তার পানির 39 শতাংশ ভারত এবং 36 শতাংশ বাংলাদেশ পাবে 1985 সালে মেয়াদ শেষ হলে দুই বছর বাড়ানো হয় সেই চুক্তি 1987 সালের পর তিস্তা নিয়ে আর কোন চুক্তি হয়নি
2011 সালের সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত 375 শতাংশ পানি দেবে ভারত কিন্তু ঢাকায় এসেও সেই চুক্তিতে সই করেননি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেয় তিস্তা পানি বন্টনে রাজি নন তিনি আর প্রতিবছর রুটিন অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে একদিকে চাষাবাদ সংকটে ফেলছে অন্যদিকে বর্ষায় না জানিয়ে গজল ডোবা বাঁধ হঠাৎ খুলে দিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে [মিউজিক] তিস্তাপারের দুর্দশা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির কাছে অস্বস্তি জানালেও বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়নি এরই মধ্যে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের জন্য আসার আলো নিয়ে এগিয়ে
আসে চীন বাংলাদেশ অংশে তিস্তা খনন করা দুই তীরে 133 km এলাকায় উঁচু বাঁধ দেয়া স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ এবং 150 মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইকোনমিক জোনসহ বেশ কিছু পরিকল্পনার প্রস্তাব করে চীন এতে সম্মত দেয় বাংলাদেশ কিন্তু ভারতের কপালে পড়ে চীন তার ভাঁধ 2022 সালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত যখন তিস্তাপারের সম্ভাব্য এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন তখন বিষয়টি নিয়ে মাথা ব্যথা শুরু হয় ভারতের কারণ তিস্তা প্রকল্পে ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের 100 কিলোমিটার এর মধ্যে চীনের জোরালো উপস্থিতি থাকবে কারণ এর কাছাকাছি ভারতের চিকেন নেক রয়েছে এর মাধ্যমে ভারতের সেভেন সিস্টারস এর সঙ্গে
বাকি দেশের সংযোগ তাই এত কাছাকাছি চীনের অবস্থান থাকলে নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ হিসেবে মনে করছে ভারত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহী হয়ে ওঠার বড় কারণ হচ্ছে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই প্রজেক্ট আর এর আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ চীন ভারত মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর প্রস্তাবিত এই করিডরের মাধ্যমে চীন তাদের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান প্রদেশকে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় যে জায়গাটিতে চীন তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইছে সেটি ভারতের স্পর্শকাতর এলাকার খুব কাছাকাছি কারণ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সংযোগ স্থাপন করেছে শিলিগুড়ি করিডর মূলত ভূরাজনৈতিকভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ভারত কখনোই চায়নি তিস্তা প্রকল্পে চীন হস্তক্ষেপ করুক
এছাড়া অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনে কর্মরত দিল্লির মুখাপেক্ষী কিছু আমলাও ফাইল আটকে রেখে কয়েক বছর ধরে মহাপ্রকল্পে বাধার সৃষ্টি [মিউজিক] করে বিগত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই ঝুলেছিল তিস্তা চুক্তি কূটনীতিকরা মনে করেন ভারত প্রেমে প্রতিবছর লাখো মানুষের ভাগ্য বিসর্জন দিয়েছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার তবে 2024 সালের 5 আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর পাল্টেছে দৃশ্যপট নতজানু হয়ে নয় তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন আর পানির ন্যাজ্য চিকিৎসা আদায়ে ভারতের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলার হুশিয়ারি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেওয়া হয় চীনের সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনা 2025 সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে