হায়দ্রাবাদ এই নাম শুনলেই প্রথমেই দক্ষিণী সিনেমার কথা মাথায় আসবে অনেকের রামোজি ফিল্ম সিটির খ্যাতি বাংলাদেশ সহ পুরো এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত তবে সিনেমা তার পাশাপাশি হায়দ্রাবাদ আরেকটি কারণে বিখ্যাত এখানকার মানুষ প্রচন্ড রকমের স্বাধীন জেতা হায়দ্রাবাদকে ব্রিটিশরা পুরোপুরি বধ করতে পারেনি দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারত পাকিস্তানের মাঝেও স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে হায়দ্রাবাদ টিকেছিল ভারত কিংবা পাকিস্তান কারো সাথেই যুক্ত হয়নি তারা কিন্তু 47 এর দেশভাগের মাত্র এক বছর পরেই সেই হায়দ্রাবাদকে হার মানতে হয়েছিল ভারতীয় আগ্রাসনের সামনে সে সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না তাই অল আইজ অন হায়দ্রাবাদ নামে কেউ হ্যাশট্যাগ দেয়নি কেউ তুলে ধরেনি এই অঞ্চলে সংঘটিত হওয়া
অন্যতম ঘৃণিত গণহত্যার কথা এমনকি সরকারি নথিপত্রেও বেমালুম চেপে যাওয়া হয় হায়দ্রাবাদ ম্যাসাকারের ঘটনা প্রায় 40000 নিহত মানুষের রক্ত আর বোবা আর্তনাদ চাপা পড়ে যায় জাতীয়তাবাদের উগ্র আস্ফালনের নিচে চলুন আজকে সেই চেপে রাখা ইতিহাসকেই অতীত খুরে তুলে আনার চেষ্টা [মিউজিক] করি 1948 সালে তোলা বিখ্যাত একটা ছবি হয়তোবা আপনারা অনেকেই দেখেননি ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল নেমে আসছেন বিমান থেকে তাকে বরণ করার জন্য রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী শাহ চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না তার থাকবে কিভাবে কয়েকদিন আগেই যিনি ছিলেন হায়দ্রাবাদের একচ্ছত্র অধিপতি হায়দ্রাবাদের
মাটিতে যার কথা ছিল শেষ কথা যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর মুখের উপর ফোনের লাইন কেটে দিতেন সেই লোকটা নতজান হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন ব্যক্তির সাথে সামনে এটা তিনি নিজেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি তো তখন এক পরাজিত সেনাপতি বিজয়ীর সামনে কুর্নিষ্ঠকে দাঁড়িয়ে থাকাই যার কাজ মীর ওসমান আলীর মুখে তখন রাজ্যের অন্ধকার সে অন্ধকার তো তখন গ্রাস করেছে হায়দ্রাবাদের মানচিত্রকেও তবে এই অন্ধকার নেমে আসার পেছনে হায়দ্রাবাদের এই নিজামের দায়ভারও কিন্তু কম ছিল না প্রায় 200 বছরেরও বেশি সময় ধরে হায়দ্রাবাদের শাসনভার ছিল নিজামদের হাতে এই নিজামরা ধর্মের দিক থেকে ছিলেন মুসলমান তাদের পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন আফগানিস্তান
থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক ছিল যদিও হায়দ্রাবাদের শতকরা 80 ভাগ মানুষই ছিলেন হিন্দু তবু প্রশাসনিক পদগুলোতেও ছিল মুসলমানদের আধিক্য এই লম্বা সময়টাতে নিজামদের শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেননি কেউই ব্রিটিশরা যখন ভারত দখল করল তখন নিজামরা ব্রিটিশদের সঙ্গে সন্ধি করলেন নিয়মিত খাজনা দিতেন কাজেই ব্রিটিশরাও কখনো নিজামদের বিরুদ্ধে যায়নি বরং ব্রিটিশ ভাইসরয়দের সঙ্গে নিজামদের বন্ধুত্ব ছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম প্যালেসে বেশ কয়েকজন ভাইসরয় সহ অনেক ব্রিটিশ উচ্চপদস্থ কর্তাই ছুটি কাটাতে এসেছিলেন বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়ে তবে ঝামেলা শুরু হলো তখন যখন তীব্র আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল দেশভাগের সময় নিজাম ছিলেন মীর ওসমান আলী শাহ শাসক বা নেতা হিসেবে
তিনি খুব একটা আহামরি পর্যায়ের কেউ ছিলেন সময় উপোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায়ও তার সুনাম ছিল না বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় নিজের আশেপাশে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপরই নির্ভর করতেন তিনি তাদের পরামর্শে নিজাম সিদ্ধান্ত নিলেন ভারত বা পাকিস্তান কারো সঙ্গেই যুক্ত হবে না হায়দ্রাবাদ বরং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে তারা যদিও ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশের তরফ থেকেই লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল মীর ওসমান আলীকে এমনকি মোহাম্মদ আলী জিন্নাকে পাকিস্তানের সঙ্গে হায়দ্রাবাদের অধিভুক্তির বিনিময়ে ওসমান আলীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব [মিউজিক] দিয়েছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও ওসমান আলীকে দলে টানার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু হায়দ্রাবাদ এই দুই শিবিরের কোনটিতেই যোগ দেননি
বরং স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছিল বিশ্বের [প্রশংসা] [মিউজিক] বুকে এমনটা করার পেছনে কারণ হচ্ছে ছিল সে সময় হায়দ্রাবাদের মোট আয়তন ছিল প্রায় 4 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার হায়দ্রাবাদের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ভারতের অন্য যেকোনো প্রদেশের চেয়েও বেশি যদিও এই সম্পদের বেশিরভাগ কুক্ষিগত ছিল নিজাম আর তার অনুসারীদের মধ্যেই এমনকি হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী শাহ ছিলেন সেই সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মাঝে সবচেয়ে উপরের দিকে হায়দ্রাবাদের নিজস্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল বিমানবন্দর ছিল নিজেদের জন্য আলাদা মুদ্রাও চালু করেছিল তারা কাজেই ভারত বা পাকিস্তানের অংশ না হয়ে হায়দ্রাবাদের আলাদা রাষ্ট্র হতে চাওয়ার মধ্যে
অন্যায় কিছু ছিল না কিন্তু পেটের মধ্যে একটা বিদ্রোহী রাষ্ট্রকে ভারত সরকার শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি তাই হায়দ্রাবাদকে কোন ধরনের স্বীকৃতিও দেয়নি জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বরং অনেক ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করেছিল হায়দ্রাবাদ যেহেতু ল্যান্ডলকড একটা এলাকা ছিল অর্থাৎ তাদের কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না চারপাশেই ছিল ভারতের সীমানা অনেক কিছুর জন্যই ভারতের উপর তাদের নির্ভরশীলতা ছিল এর সুযোগ নিতে শুরু করেছিল ভারত এরই মধ্যেই ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে গেলে ভারত এবং পাকিস্তান দুই আলাদা রাষ্ট্র হলো পুরো উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা [মিউজিক] যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সেখানে হিন্দুরা মার খেল মন্দির জ্বলল যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সেখানে
মুসলমানদের লাশ পড়লো হায়দ্রাবাদে কিন্তু শুরুতে সাম্প্রদায়িক কোন সংঘাত হয়নি কিন্তু কিছুদিন পরে ঘৃণার আঁচ এসে লাগলো এখানেও হিন্দু এবং মুসলমান উভয়পক্ষের মধ্যে বাড়তে থাকলো উত্তেজনা এতদিন যারা সুখে দুঃখে পাশাপাশি থেকেছে তারাই যেন শত্রু হয়ে [মিউজিক] উঠলো এদিকে নতুন দেশ গঠিত হয়েছে সেখানে প্রতিরক্ষার জন্য বাহিনী লাগবে হায়দ্রাবাদের নিজামের নির্দেশে তাই সেনাবাহিনী গঠন করার কাজ শুরু হলো যেহেতু হায়দ্রাবাদের প্রশাসনের বড় পদগুলোতে মুসলমানরাই ছিল দেখা গেল সেনাবাহিনীতেও মুসলিমরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে ভারত যেহেতু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হলে হায়দ্রাবাদের হিন্দু সেনারা অস্ত্র হাতে তুলে নেবে না এরকমটাই বিশ্বাস করতো হায়দ্রাবাদের কর্তা বিক্রীরা তাদের এমন সিদ্ধান্ত হায়দ্রাবাদের বুকে
হিন্দু মুসলমানের বিভাজন আরো বাড়িয়ে দিল প্রায় 80 ভাগ হিন্দু জনগণ ব্যাপারটাকে সহজভাবে মেনে নিল না ততদিনে হায়দ্রাবাদে এক নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে উৎপাতের নাম এমআইএম বা মজলিসে ইত্তেহাদুল [মিউজিক] মুসলিমিন এটি ছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম সমর্থিত একটি রাজনৈতিক দল তবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে এই দলটি সাম্প্রদায়িক বিষবাস্পত ছড়ানোর কাজই তখন বেশি করছিল তাদের চাপেই সেনাবাহিনীতে সিংহভাগ মুসলিম কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল যে বাহিনীর নাম দেয়া হয়েছিল [মিউজিক] রাজাকার হায়দ্রাবাদের এই রাজাকারদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ভারতের আগ্রাসন থেকে তাদের মাতৃভূমি হায়দ্রাবাদকে রক্ষা করা কিন্তু এই বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্য মাতৃভূমি রক্ষার পরিবর্তে হায়দ্রাবাদে বসবাসরত হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু করল
হায়দ্রাবাদের নিজামের কাছে এসব অভিযোগ গেলেও তিনি দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করলেন না কেউ কোন শাস্তি পেল না এতে অপরাধীরা আরো আশকারা পেয়ে গেল অন্যদিকে হায়দ্রাবাদের হিন্দুদের মধ্যে জন্ম নিতে লাগলো খুব নিজেদের দেশেই তারা নিজেদেরকে অবাঞ্ছিত ভাবতে শুরু করলেন কেউ কেউ তো প্রাণের মায়ায় হায়দ্রাবাদও ছাড়লেন এসব খবর কিন্তু চাপা রইলো না ভারত সরকার নিয়মিতই খোঁজ রাখছিল হায়দ্রাবাদে কখন কি ঘটছে হায়দ্রাবাদের নিজাম পর্তুগিজদের কাছ থেকে গোয়া প্রদেশটি কিনতে চাইছেন যাতে হায়দ্রাবাদ সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারে কিংবা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে হায়দ্রাবাদের নিজাম অস্ত্র কিনতে চাইছেন এসব খবর ভারতীয় গুপ্তচরেরা প্রতিনিয়তই ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট হিসেবে জহরলাল নেহেরুর দপ্তরে পাঠাতেন নেহেরু
দফায় দফায় হায়দ্রাবাদের নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন তবে তার নীতি ছিল ধীরে চলো হায়দ্রাবাদ নিয়ে কোন হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে রাজি ছিলেন না জহরলাল নেহেরু কিন্তু নেহেরু সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল হায়দ্রাবাদকে আর সময় দিতে রাজি ছিলেন না তিনি নেহেরুকে বোঝালেন হায়দ্রাবাদকে আশকারা দেয়া ঠিক হবে না তাছাড়া সেখানকার হিন্দুরা যেহেতু নির্যাতিত হচ্ছে রাজাকার মিলিশিয়ার দ্বারা ভারতীয় সেনারা যদি এখন হায়দ্রাবাদ দখলের পদক্ষেপ নেয় তাহলে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্য থেকেও প্রতিবাদ আসার সম্ভাবনা কম এসব হিসাব নিকাশ চূড়ান্ত করে ভারত সামরিক আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল সেনা এবং বিমান বাহিনীর সদস্যদের একটি বড় অংশকে নিয়ে আসা হলো
হায়দ্রাবাদের [মিউজিক] সীমানায় সেপ্টেম্বর 13 1948 হায়দ্রাবাদকে তখন চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী এই অভিযানের নেতৃত্বভার তুলে দেয়া হয়েছিল বাঙালি অফিসার মেজর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর হাতে দিল্লিতে স্থাপন করা ওয়ার কন্ট্রোল রুমে বসে পরিস্থিতি অবলোকন করছেন বল্লভ ভাই প্যাটল এই মিশনের নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন হলো ভোর থেকেই শুরু হলো তীব্র আক্রমণ স্থলপথে হায়দ্রাবাদের ভেতরে ঢুকলো ভারতীয় সেনারা আকাশপথে আক্রমণ করল বিমান বাহিনী প্রায় লক্ষাধিক ভারতীয় সেনার সামনে মাত্র হাজার ছয় রাজাকার প্যারামিলিটারি ফোর্স ফলে যা হওয়ার তাই হলো কচুকাটা করা হলো রাজাকারদের মাত্র চার দিনের যুদ্ধেই হায়দ্রাবাদ দখল করল ভারত হায়দ্রাবাদের নিজাম বাধ্য হলেন ভারত সরকারের বশ্যতা
মেনে নিতে যেকোনো অঞ্চলে যখন ক্ষমতার প্যারাডাইম শিফট হয় তখন সেখানে একটা অস্থিরতা বিরাজ করে জাতিগত সহিংসতা বেড়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় যারা এতদিন নির্যাতিত হয়েছেন তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কিন্তু স্বাধীনতার এক বছর বাদেই ভারতীয় সেনাদের হাতে পতন হওয়ার পর হায়দ্রাবাদে যা ঘটেছিল সেটাকে গণহত্যা বললেও কম বলা হয় রাজাকার মিলিয়েশিয়াদের খতম করেই ক্ষান্ত থাকেন এই ভারতীয় সেনারা হায়দ্রাবাদের বহু হিন্দু নাগরিকের সহায়তায় হায়দ্রাবাদের স্থানীয় মুসলমানদের উপরও চালানো হয়েছিল মেসাকার অবাক করার মত ব্যাপার হচ্ছে হায়দ্রাবাদের এই মেসাকার সম্পর্কে দলিল দস্তাবেজ বলতে গেলে কিছুই পাওয়া যায় না অথেন্টিক তেমন কোন ইনফরমেশনই রাখা হয়নি এমনকি হায়দ্রাবাদ দখলের জন্য যে
সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছিল সেই অপারেশন পোলোর বিস্তারিত নেই অনেক জায়গায় যেটুকু আছে সেখানে কেবলই ভারতীয় সেনাদের স্তুতি কিভাবে তারা হায়দ্রাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তার বর্ণনা কিন্তু চার দিনের যুদ্ধে কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন কতজন আহত নিহত হয়েছিলেন কতজন বন্দি হয়েছেন তার বিবরণ নেই বললেই চলে জহরলাল নেহেরু সরকার অভিযানের পরপরই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে একটি কমিটি গঠন করেছিল যে কমিটির প্রধান ছিলেন পন্ডিত সুন্দরলাল সেই রিপোর্টও 2013 সালের আগ পর্যন্ত লুকিয়ে রেখেছিল ভারত সরকার কারণ যেই নিশংসতা 48 এ হায়দ্রাবাদ দেখেছে তার বর্ণনা কখনোই প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি ভারত [মিউজিক] হায়দ্রাবাদ এসে কি ঘটেছিল সেই অন্ধকার সময় সুন্দরলাল রিপোর্ট অনুসারেই না
হয় বলা [মিউজিক] [মিউজিক] যাক পন্ডিত সুন্দরলাল এবং তার দলের সদস্যরা যখন হায়দ্রাবাদ পৌঁছেছিলেন তখন প্রাচুর্যে ঘেরা শহরটি ধ্বংসস্তপে হয়েছে মুসলিম অধ্যষিত এলাকাগুলোতে চলেছে গণহত্যা এবং লুটরাজ পুরুষদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলার মত ঘটনাও ঘটেছে সুন্দরলাল এবং তার দলের সদস্যরা একটি গ্রামে গিয়েছিলেন সার্ভে করার জন্য সেখানে এক বাড়িতেই কুয়ার পাশে 11 টি মৃতদেহ দেখেছিলেন তারা সেখানে এক নারীর মৃতদেহ পড়েছিল যাকে খুন করা হয়েছে অন্তত একদিন আগে অথচ সেই মহিলার শিশু সন্তানটি তখনও মায়ের স্তন কামড়ে যাচ্ছিল একটুখানি দুধের আশায় এমন হৃদয় বিদার দৃশ্য অজস্র দেখেছেন তারা সেগুলো নথিভুক্ত করেছেন সুন্দরলাল এবং তার কমিটির হিসেবে
হায়দ্রাবাদ মেসাকারে নিহত হয়েছিল কমপক্ষে 27 হাজার মানুষ এই সংখ্যাটা 40000 ও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তাদের মন্তব্য ছিল যেহেতু অনেক এলাকায় তারা যেতে পারেননি অথচ ভারত সরকার কখনো অফিশিয়ালি এই মৃত্যুর সংখ্যাটাকে স্বীকার করেনি স্বীকার করা তো দূরের কথা 2013 সালের আগ পর্যন্ত সুন্দরলাল কমিটির এই রিপোর্টটিও জনসম্মুখে আসতে দেয়নি তারা [মিউজিক] সুন্দরলালের রিপোর্টে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে নির্যাতিত কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিল তারা সেই মানুষগুলো কমিটির সদস্যদের জানিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে ভুক্তভোগীদের দাবি অনুযায়ী ভারতীয় সেনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্থানীয় মানুষজনকে নিরস্ত্র করেছিল বলা হয়েছিল সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা যাতে না হয় এ কারণে এই পদক্ষেপ অথচ নিরস্ত্র করা হয়েছিল শুধু মুসলিমরা গুলোকে বিকেলের পর আশেপাশের হিন্দু গ্রামগুলো থেকে উন্মত্ত জনতা যখন মুসলমানদের গ্রামগুলোতে আক্রমণ করল তখন প্রতিরোধ করার মতো কিছুই ছিল না বাসিন্দাদের কাছে কারণ তরকারি কাটার দা বোটিও নিয়ে গিয়েছিল সেনারা এভাবেই কোথাও জোর খাটিয়ে কোথাও আবার মিথ্যা আশ্বাসে বোকা বানিয়ে নিরস্ত্র করে গণহত্যা চালানো হয়েছিল হায়দ্রাবাদের মুসলমানদের উপর হায়দ্রাবাদ দখল নিয়ে কথা উঠলে ভারত বরাবরই একটা যুক্তি হায়দ্রাবাদের সাধারণ মানুষ তো ভারতীয় বাহিনীকে বাধা দেয়নি তারাই ভারতের সাথে একাত্ম হতে চেয়েছিল নইলে তো মাত্র চার দিনে হায়দ্রাবাদকে নিজামের কবল থেকে মুক্ত করতে পারতো না ভারতীয়রা
হ্যাঁ এই কথাটা সত্যি যে রাজ্জাকার বাহিনী ছাড়া আর কোন ধরনের প্রতিরোধের মুখে ভারতীয় সেনাদের পড়তে হয়নি যেমনটি লর্ড ক্লাইভের বেলায় ঘটেছিল পলাশীর প্রান্তরে সিরাজুদ্দৌলার পতনের সময় বাংলার জনগণ যেমন নির্লিপ্ত ছিল ঠিক তেমনটাই ছিল হায়দ্রাবাদের বেশিরভাগ মানুষ কারণ নিজাম মীর ওসমান আলী শাহর দিনে সরকারি কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন তাছাড়া সেনাবাহিনী নিয়োগ নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণ ছিল নিজামের উপর ক্ষিপ্ত তাদের মনে হচ্ছিল নিজাম বোধহয় শুধু মুসলমানদেরকেই হায়দ্রাবাদের নাগরিক মনে করেন হিন্দুদেরকে তিনি নাগরিক হিসেবে গোনায় ধরেন না নিজাম ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন এক শাসক তিনি জনগণের এই ক্ষোভের গল্পগুলো পড়তেই পারেননি আর এ কারণে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের মুখে তারা নিজামের
পাশে তো দাঁড়ায়নি বরং কিছু ক্ষেত্রে গণহত্যায় সহযোগিতাই করেছে [মিউজিক] বিজেপি শাসিত ভারতে এখন 17ই সেপ্টেম্বরের দিনটিকে হায়দ্রাবাদ মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয় বলা হয় এই দিনে রাজাকারদের অত্যাচারের কবল থেকে হায়দ্রাবাদকে মুক্ত করেছিল ভারত অথচ বেমালুম অস্বীকার করে যাওয়া হয় 27 থেকে 40 হাজার নিরীহ মানুষের নির্মম মৃত্যুর ঘটনাকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সেটাকে বাড়িয়ে চড়িয়ে ভারতের গদি মিডিয়ার বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়ে দেয় অথচ জাতীয়তাবাদের আফিমের বোধ হয়ে থাকা এই মিডিয়াকে কখনো দেখবেন না হায়দ্রাবাদ মেসাকার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে হায়দ্রাবাদের ওই 27 থেকে 40 হাজার নিহত মানুষ তাদের জন্য এক্সিস্টই করে না এই
মানুষগুলোর জন্য কেউ চোখের পানি ফেলে না কালের গর্ভে তারা হারিয়ে গেছেন চিরতরে তাদের চিহ্নটুকু মুছে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর একটিও পাওয়া যাবে না [মিউজিক] اللہ [মিউজিক]