অ্যাপেল কোম্পানির ফাউন্ডার স্টিভ জবস যিনি একজন ব্রিলিয়ান্ট লিডার যাকে নিয়ে হাজার হাজার মোটিভেশনাল ভিডিওতে পুরো ইউটিউব ভরে আছে হয়তো তুমি ওরকম অনেক ভিডিও দেখেছো তবে আজকের এই ভিডিওটা একটু অন্যরকম হতে চলছে আচ্ছা যদি এরকম হয় যে স্টিভ জফতার 50 বছরের জীবনে যা যা শিখেছেন তা যদি আমি তোমাকে মাত্র 15 মিনিটে শিখিয়ে দেই তাহলে বিষয়টা কেমন হবে উত্তরে হয়তো বলবে হ্যাঁ ভালোই তো আসলে আজ সেটাই হতে চলছে 2005 সালে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে স্টিভ জবস একটি স্পেস দিয়েছিলেন আর এতে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় লার্নিং কে মাত্র 15 মিনিটে বলেছিলেন আর সেটা তিনটি গল্পের মধ্য দিয়ে এখন যদি
আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করি যে স্টিভ জবস এর সেই স্ট্যান্ডফোর্ড কমেন্সমেন্ট স্পিচটা তুমি কি শুনেছিলে কয়েকজন বাদে বেশিরভাগ মানুষ হয়তো বলবে যে না আমি শুনিনি আর এই না শোনার একটা বিশেষ কারণ হতে পারে সেই স্পিচটা ইংলিশে ছিল বড় বড় মোটিভেশনাল স্পিকাররা এই স্পিচটাকে হাইলি রেকমেন্ড করেছেন সবার জন্য জীবনে একবার হলেও যে স্পিচটা প্রতিটি মানুষের শোনা উচিত বাট শুধু ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ারের জন্য ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে সেরা স্পিচটা পৃথিবীর সেরা অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যটা তুমি শুনতে পারবে না তা তো হতে পারে না তাহলে আজ কথা সব স্টিভ জবস এর আমি শুধু ভয়েস দিয়ে বাংলায় অনেক সহজ ভাষার ব্যবহার করে সেই বক্তব্যটা তোমাদের
শোনাচ্ছি যাতে তুমি বলতে পারো যে হ্যাঁ সেই পৃথিবী বিখ্যাত ভাষণটা আমি শুনেছিলাম তাহলে কিছু সময়ের জন্য মনের সব চিন্তার বাইরের কোলাহল থেকে নিজেকে একটু মুক্ত করে নাও তুমি আজ সেটাই শুনতে চলছো যার মাধ্যমে তোমার পুরো জীবনটা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে চলো তাহলে শুরু করা যাক পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমাদের সমবর্তন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি সত্যি বলতে কি আমি কখনো কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করিনি আর আজকেই আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাজ থেকে দেখছি আজ আমি তোমাদের আমার জীবনের তিনটি গল্প শোনাতে চাই আহামরি কিছু না শুধু তিনটি গল্প প্রথম গল্পটি হচ্ছে
জীবনটাকে এক সুতোয় বাঁধা নিয়ে রিট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ছয় মাসের মাথায় আমি পড়ালেখা ছেড়ে দেই অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রায় বছর দেড়েক আমি সেখানে ছিলাম আমি কেন পড়ালেখা ছেড়েছিলাম ঘটনা শুরু আমার জন্মের আগে থেকে আমার মা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবিবাহিতা শিক্ষার্থী তিনি আমাকে দত্তক দিতে চাইলেন মা আমাকে এমন পরিবারে দত্তক দিতে চাইলেন যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে একজন আইনজীবী ও তার স্ত্রী আমাকে দত্তক নেওয়ার জন্য রাজি হলেন কিন্তু জন্মের পর আমার মা-বাবার মনে হলো তারা আসলে একটি মেয়ে সন্তান আশা করেছিলেন গভীর রাতে তারা সেই আইনজীবী পরিবারকে ফোন দিয়ে বললেন অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের একটি ছেলে সন্তান হয়েছে
আপনারা কি তাকে দত্তক নিতে চান তারা বললেন অবশ্যই আমার মা পরে জানতে পারলেন আইনজীবী পরিবারের কেউই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেননি আমার দত্তক বাবা বাবা এমনকি হাই স্কুলেও পাশ করেননি এসব জেনে আমার মা দত্তক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি কয়েক বছর পর আমার দত্তক বাবা-মা কথা দিলেন তারা অবশ্যই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াবেন এবং সেই কথা শুনে আমার মা আমাকে দত্তক দিতে রাজি হলেন এভাবে আমার জীবন শুরু হলো 17 বছর পর আমি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় গিয়েছিলাম কিন্তু আমি বোকার মতো স্টানফোর্ডের মত ব্যয়বহুল একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলাম আমার নিম্ন মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে খরচ হয়ে যাচ্ছে
ছিল ছয় মাস এভাবে যাওয়ার পর আমি এর কোন মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমার ভবিষ্যৎ জীবন তৈরিতে সেই বিশ্ববিদ্যালয় কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না অথচ আমি আমার বাবা-মার সারাজীবনের জমানো টাকা লেখাপড়ার পিছনে ঢেলে দিচ্ছিলাম তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং বিশ্বাস রেখেছিলাম যেন এরপর সবকিছু ঠিকঠাক চলে সে সময়ের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন বুঝতে পারি সেটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার পরে আমি সহজেই বিরক্তিকর সব ক্লাস থেকে মুক্তি পেলাম এবং তারপর আমার পছন্দের ক্লাসগুলোতে ভর্তি হতে শুরু করলাম তখনকার সব ঘটনাই খুব রোমান্টিক ছিল না আমার
নিজের কোন থাকার জায়গা ছিল না তাই আমি আমার বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমাতাম ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাস সেন্ট করে পেতাম এবং তা দিয়ে খাবার কিনে খেতাম সপ্তাহে অন্তত একবার ভালো খেতে প্রতি রবিবার রাতে সাত মাইল হেঁটে শহরের অপর প্রান্তে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম আমার ভীষণ ভালো লাগতো আমার কৌতুহল আর ইন্টিউশনের কারণে আমি বেপরোয়া যা কিছুই করেছি পরবর্তীতে তার বেশিরভাগই আমার কাছে মূল্যবান হিসেবে প্রতিমান হয়েছে তোমাদের একটা উদাহরণ দেই রিড কলেজে সেই সময় সম্ভবত দেশের সেরা ক্যালিগ্রাফি কোর্স হতো ক্যাম্পাসে সব পোস্টার আর লেভেল আঁকা হতো হাতি করা ক্যালিগ্রাফি দিয়ে যেহেতু আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম
না তাই সহজেই ক্যালিগ্রাফি শেখার নতুন একটা কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম আমি সেরিফ ও সেন্সেরিফ টাইপসে শিখলাম বিভিন্ন ফন্টের স্পেস কমানো বাড়ানো সহ চমৎকার টাইফো গ্রাফি তৈরির কৌশল শিখলাম ব্যাপারটা ছিল দারুণ ঐতিহাসিক বিজ্ঞানের বাইরে একটা আর্ট যা আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করেছিল এই ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা যে আমার জীবনে কাজে আসবে সেটা আমি কখনো ভাবিনি কিন্তু 10 বছর পর আমরা যখন প্রথম ম্যাকিংটস কম্পিউটার ডিজাইন করি তখন সেই জ্ঞানের পুরোটাই আমার কাজে লেগেছিল ম্যাক কম্পিউটারে আমরা সেই ডিজাইনটাই ব্যবহার করি এটি ছিল সুন্দর টাইপোগ্রাফি সমৃদ্ধ প্রথম কম্পিউটার আমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি না হতাম তবে ম্যাক কম্পিউটারে নানা টাইপ ফেস
আর আনুপাতিক দূরত্বের ফন্ট থাকতো না আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের কাজই নকল করেছে তাই বলা যায় কোন পার্সোনাল কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকতো না বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়লে আমি কখনোই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না ফলে পার্সোনাল কোন কম্পিউটারই হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকতো না অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন সময়ে সেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোর এমন যোগসূত্র তৈরি করা সম্ভব ছিল না কিন্তু 10 বছর পরে পেছনে ফিরে তাকালে তার সবকিছুই পরিষ্কার বুঝতে পারি তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অতীতের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে একসুতে বাঁধতে পারবে না এটা শুধুমাত্র পেছনে তাকিয়ে সম্ভব তাই তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে বিচ্ছিন্ন সব ঘটনা ভবিষ্যতে একটা ভালো
ফল তৈরি করবে তোমাকে একটা কিছুর উপর বিশ্বাস রাখতেই হবে তোমার নিছক ধারণা ভাগ্য জীবন কর্ম কিছু একটা যদি তুমি বিশ্বাস করো যে জীবনের বিচ্ছিন্ন সব ঘটনা একদিন ভালো ফল বয়ে আনবে তবেই তুমি মনের কথামতো চলতে পারবে আর এভাবেই তুমি সফল হতে পারবে আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প আমি ভাগ্যবান ছিলাম জীবনের প্রথম দিকেই আমি আমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে পেয়েছিলাম 20 বছর বয়সে আমি আর রোজ মিলে আমাদের পারিবারিক গ্যারেজ অ্যাপেল কোম্পানি শুরু করেছিলাম আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম 10 বছরের মাথায় গ্যারেজের দুইজনের কোম্পানি থেকে অ্যাপেল 4000 কর্মীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয় আমার বয়স যখন
30 তার কিছুদিন আগে আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিংটোস বাজারে ছাড়ি আর ঠিক তখনই আমার চাকরিটা চলে যায় কিভাবে একজন তার নিজের হাতে গড়া কোম্পানি থেকে চাকরি হারাতে পারে appল যখন বেড়ে উঠেছে তখন আমরা বেশ মেধাবী একজনকে নিয়োগ দিয়েছিলাম ভাবলাম সে আমাদের সাথে ভালোভাবে কোম্পানিটা এগিয়ে নিবে প্রথম বছর সবকিছু ভালোভাবেই গেল কিন্তু ধীরে ধীরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার সাথে আমার চিন্তা ভাবনার অমিল দেখা দিতে লাগলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বিভাগও তার পক্ষ নিল অতএব 30 বছর বয়সে আমি আমার কোম্পানি থেকে আউট হয়ে গেলাম বেশ প্রকাশ্যে আউট হয়ে গেলাম আমার তারুণ্যের সব স্বপ্ন এক নিমিষে হাতছাড়া হয়ে গেল
আমি একদম ভেঙে পড়লাম পরের কয়েক মাস বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কি করব আমার মনে হচ্ছিল আমি আগের প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছি আমার হাতে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা আমি পালন করতে পারিনি আমি ডেভিড প্যাকার্ড এবং ববনয়েস এর সাথে দেখা করে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলাম আমার ব্যর্থতার গল্প চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো আমি ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবলাম কিন্তু ধীরে ধীরে আমি একটা বিষয় অনুভব করতে লাগলাম সবকিছুর পরেও আমি আমার আগের সব কাজ ভালোবাসতাম appলের ঘটনাগুলি সেই সত্যকে এতটুকু বদলাতে পারেনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিন্তু তারপরেও কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি তাই আমি আবার নতুন করে
শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন বিষয়টা বুঝতে পারিনি কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম appল থেকে চাকরিচ যুদ্ধ হওয়াটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা সফল হওয়ার সব ভার থেকে মুক্ত হয়ে আমি আবার নতুন করে শুরু করলাম নিশ্চয়তাবিহীন নতুন জীবন এর ফলে আমি আমার জীবনের অন্যতম সৃজনশীল সময়ে যাত্রা করার সুযোগ পেলাম পরবর্তী পাঁচ বছর আমি নেক্সট নামে একটি কোম্পানি শুরু করি পিকচার নামে আরো একটি কোম্পানি শুরু করি এবং প্রেমে পড়ি অসাধারণ এক মেয়ের যে পরে আমাকে বিয়ে করেছে পিকচার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম এনিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করি পিকচার বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এনিমেশন স্টুডিও এরপর ঘটে কিছু
চমকপ্রদ ঘটনা appল নেক্সট কে কিনে নেয় এবং আমি apple এ ফিরে আসি নেক্সটে আমরা যে প্রযুক্তি তৈরি করি সেটা এখন appল এর ব্যবসার সাফল্যের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অন্যদিকে কে লরেন আর আমি মিলে গড়ে তুলি একটা সুখী পরিবার আমি নিশ্চিত এগুলোর কিছুই আমার জীবনে ঘটতো না যদি আমাকে অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়ানো হতো এটা ছিল আমার জন্য খুব তেতস্বাদের একটা ওষুধ কিন্তু আমার মনে হয় রোগীর সেটা দরকারও ছিল কখনো কখনো জীবন ইট দিয়ে তোমার মাথায় আঘাত করবে তখন বিশ্বাস হারিও না আমি নিশ্চিত আমি সামনে এগিয়ে যেতে পেরেছি কারণ আমি যা করেছি ভালোবেসে করেছি তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার
কাজটি খুঁজে পেতে হবে ঠিক যেমন তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে বেড়াও তোমার কাজ নিয়ে তুমি তখনই খুশি হবে যখন তুমি তোমার পছন্দের কাজ করবে তোমার জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে থাকবে তোমার কাজ তুমি তখনই তোমার পছন্দের কাজ করতে পারবে যখন তুমি তোমার কাজকে ভালোবাসবে যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পেয়ে থাকো তাহলে খুঁজতে থাকো থেমে যেও না ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেলে তোমার মন তোমাকে ঠিকই তা জানিয়ে দেবে এটা যেকোনো সম্পর্কের মতোই যত সময় যাবে ভালোবাসার কাজটি তোমার ততই ভালো লাগবে অতএব ভালো বাসার কাজটি খুঁজতে থাকো থেমে যেও না আমার শেষ গল্পটি মৃত্যু নিয়ে আমার
17 বছর বয়সে আমি একটা লেখা পড়েছিলাম তুমি যদি প্রতিটা দিন এভাবে শুরু করো যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন তাহলে একদিন নিশ্চিতভাবেই তোমার সেই ভাবনাটা সত্য হবে সেই কথাটা আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে সেই থেকে গত 33 বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো তাহলে আমি কি তাই করতাম যা আমি আজ করতে যাচ্ছি পরপর কিছুদিন যদি সেই প্রশ্নের উত্তর না হতো তবে আমি বুঝে নিতাম আমার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে আমি শীঘ্রই মরে যাব এই ভাবনাটি জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে
কারণ সবকিছু সকল আশা প্রত্যাশা গর্ব ব্যর্থতার ভয় বা লজ্জা সবকিছু মৃত্যুর মুখে ম্লান হয়ে যায় টিকে থাকে শুধুমাত্র সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো আমি জানি কোন কিছু হারানোর ভয় মন থেকে দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এটা মনে করা যে তুমি একদিন মরে যাবে তুমি আসলে সবকিছু হারিয়েই বসে আছো তাই তোমার মন যা চায় তা না করার কোন কারণই থাকতে পারে না প্রায় বছরখানেক আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে একদিন সকাল সাড়ে সাতটায় আমার একটা স্ক্যান হয় তাতে স্পষ্টভাবে আমার প্যানিক্রিয়াসে একটা টিউমার দেখা যায় আমি তখনও জানতাম না প্যানিক্রিয়াস জিনিসটাই বাকি ডাক্তাররা আমাকে বলে দিলেন যে এটা এমন
একটা ক্যান্সার যার কোন চিকিৎসা নেই এবং আমি আর বড় জোর তিন থেকে ছয় মাস বাঁচবো তারা আমাকে বাসায় ফিরে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে ফেলতে বললেন সোজা কথায় ডাক্তাররা আমাকে মৃত্যু জন্য প্রস্তুত হতে বললেন এর মানে হচ্ছে তুমি তোমার সন্তানদের আগামী 10 বছরে যা যা বলবে বলে ঠিক করেছো তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বলে ফেলতে হবে এর মানে হচ্ছে সবকিছু গোজগাছ করে রাখো যাতে তোমার পরিবারের জন্য ব্যাপারটি যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয় এর মানে হচ্ছে সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেওয়া সেদিন সারাটা দিন আমার ডায়াগনোসিস হলো সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো তারা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে
দিল সেটা আমার পেটের ভেতর দিয়ে ইন্টেস্টাইনের ভেতর দিয়ে গিয়ে ব্যানিক সুই ঢুকিয়ে সেই টিউমার থেকে কিছু কোষ নিয়ে এলো আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম তাই আমি কিছুই দেখিনি কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল ডাক্তার এন্ডোস্কপি থেকে পাওয়া কোষগুলি মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করার পর কান্না শুরু করেছিল কারণ যে ধরনের প্যানিক্রিয়াটিক ক্যান্সার হয়েছিল সেটা আসলে সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব এরপর আমার সার্জারি হলো এবং এখন আমি ভালো আছি এটাই আমার মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া আমি আশা করি আরো কয়েক দশকের জন্য আমাকে যেন মৃত্যুর কাছাকাছি আর যেতে না হয় মৃত্যু আগে আমার কাছে শুধুই ভাবনার পর্যায়ে ছিল কিন্তু ভয়াবহ সে অভিজ্ঞতার পরে
এখন মৃত্যু সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই কিছু কথা তোমাদের জানাতে পারি আসলে কেউই মরে যেতে চায় না এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চান তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য মরতে চান না কিন্তু তারপরে মৃত্যুই আমাদের সবার চূড়ান্ত গন্তব্য মৃত্যু থেকে কেউই পালাতে পারেনি এবং সেটাই হওয়া উচিত কারণ মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার এটা জীবনটাকে বদলে দেওয়ার এজেন্ট মৃত্যু পুরনোকে ধুয়ে মুছে নতুনের জন্য জায়গা করে দেয় আর এই মুহূর্তে তোমরাই সেই নতুন কিন্তু ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তোমরাও ধুয়ে মুছে যাবে সেদিন খুব দূরে নয় এতটা নাটকীয় ভাবে বলার জন্য দুঃখিত কিন্তু এটাই পরম সত্য তোমাদের সময়
সীমিত তাই অন্য কারো জীবনযাপন করে সময় নষ্ট করো না অন্যের চিন্তা ভাবনার ফলে যে বিশ্বাস জন্ম নেয় সে বিশ্বাসের ফাঁদে পড়ে নিজের জীবনটা চালিও না অন্যের মতামতের কোলাহলে নিজের মনের কথাগুলোকে চাপা দিও না সবচেয়ে বড় কথা সাহসী হও যেন নিজের মনের কথা মতো চলতে পারো শুধুমাত্র তোমার মনই জানে তুমি আসলে কি হতে চাও বাকি আর সবই মৌনু আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন একটা পত্রিকা বের হতো যার নাম ছিল দ্যা হোল আর্থ ক্যাটালগ পত্রিকাটি আমাদের প্রজন্মের কাছে পবিত্র গ্রন্থের মতো ছিল সেটা বের করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্র্যান্ড নামে একজন ভদ্রলোক যিনি মেনল পার্কের কাছেই থাকতেন তিনি তার কাব্যময়তা
দিয়ে পত্রিকাটি জীবন্ত করে তুলেছিলেন এটা ছিল 60 এর দশকের শেষ দিকের কথা কম্পিউটার এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং তখনো শুরু হয়নি তাই পত্রিকাটি টাইপ লেটার কাঁচি পোলারেড ক্যামেরা এসব দিয়েই তৈরি হয়েছিল পত্রিকাটি ছিল কাগজের মোরকে বাঁধা গুগল এর মতো আদর্শগত বহু তথ্য ও চমৎকার ধারণের সমৃদ্ধ পত্রিকাটি গুগল এর 35 বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল স্টুয়ার্তার দলবল নিয়ে দালালার্স ক্যাটালগ এর অনেকগুলি সংখ্যা বের করেছিলেন পত্রিকাটি প্রকাশনার শেষ হয় একটা সমাপ্তি সংখ্যা দিয়ে এটা ছিল 70 এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা আমার তখন তোমাদের মত বয়স পত্রিকাটির সমাপ্তির সংখ্যায় পেছনের মোড়কে ভোরের গ্রামের পথের একটা ছবি ছিল তোমাদের মধ্যে যারা অ্যাডভেঞ্চার
প্রিয় তারা হয়তো তেমন গ্রামের পথে বেড়াতে যেতে পারো ছবিটার নিচে লেখা ছিল ক্ষুধার্থ থেকো বোকা থেকো বিদায়ের সময় এটাই ছিল তাদের শেষ মেসেজ ক্ষুধার্থ থেকো বোকা থেকো আমি আমার জন্য আজীবন এটাই প্রার্থনা করেছি আর আজ গ্রাজুয়েশন শেষে তোমাদের নতুন জীবন শুরুর মুহূর্তে আমি সেই প্রার্থনাই তোমাদের জন্য করছি ক্ষুধার্থ থেকো বোকা থেকো সবাইকে অনেক ধন্যবাদ [মিউজিক]