বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার যদিও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে কিন্তু ভারতের অর্থনীতিও বাংলাদেশের উপর দারুণভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের হিসেব নিকেশ ভারতের অর্থনীতির উত্থান-পতন অনেকাংশেই প্রভাবিত [মিউজিক] করে ভারতের শীর্ষ রপ্তানি বাজারের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দেয়া তথ্যমতে 2023-24 অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে 1100 কোটি ডলার মূল্যের পণ্য বা সেবা রপ্তানি করেছে এর মধ্যে দেশটি কেবল বিদ্যুতের রপ্তানি করেছে 100 কোটি ডলারের বেশি মূল্যের যা মোট রপ্তানির 93 শতাংশ বিদ্যুৎ ছাড়াও ভারত গত অর্থবছরে বাংলাদেশে তুলার রপ্তানি করে 236 কোটি 88 লাখ ডলার জ্বালানি তেল বিটুমিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ রপ্তানি
করে 230 কোটি 76 লাখ ডলার রেল ও ইঞ্জিনিয়ার এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে 60 কোটি 34 লাখ ডলার এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে 54 কোটি 44 লাখ ডলার আয় করেছে এছাড়া ভারত বাংলাদেশে খাদ্যশস্য চাল চিনি ইত্যাদিও রপ্তানি করে অর্থাৎ বাংলাদেশে পণ্য এবং সেবা রপ্তানি করে ভারত বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে যা তাদের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অজয় সাহে এর কথায় আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি বলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রায় 300 মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে বলে আমরা অনুমান করছি আমরা প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় 30 মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করি বাংলাদেশের উপর ভারতের অর্থনৈতিক নির্ভরতা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগেও দেখা যায় 2019 সালের হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল 36 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ হয়েছে মূলত বিদ্যুত জ্বালানি টেক্সটাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে শুধু রপ্তানি বাণিজ্য আর বিনিয়োগই নয় বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করেন 2017 সাল থেকে ভারতে এ পর্যন্ত 10 বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স গেছে বাংলাদেশ থেকে ফলে বাংলাদেশ ভারতের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রাপ্তির দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং
সুরক্ষা সেবা বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে 2023 সালের 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ-বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা 1 লাখ 7167 জন যার মধ্যে ভারতীয় নাগরিক কেবল 37464 জন সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত জুনে সংসদে জানিয়েছিলেন চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে 5 কোটি 6 লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ভারতীয়রা তবে এগুলো সরকারি হিসাব যা ভারতের বৈধ অভিবাষীদের আমলে নিয়ে করা হয় কিন্তু অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়র সংখ্যা বেসরকারিভাবে অনেক বেশি এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স এর পরিমাণও বিশাল সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোঃ তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন আনঅফিশিয়ালি বাংলাদেশ থেকে পাঁচ
বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স যায় ভারতে এ পরিসংখ্যান থেকে ভারতের রেমিটেন্স খাতে বাংলাদেশের প্রভাব কতটা তা স্পষ্ট হয়ে যায় জার্মান গণমাধ্যম ডয়েভেলে তাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান বেশ শক্ত বাংলাদেশের পোশাক খাতে ডিজাইনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে দেশীয় দক্ষ জনশক্তির অভাব থাকায় এসব পদে ভারতীয়রা জায়গা করে নিচ্ছে তাছাড়া বাংলাদেশের পোশাকের বায়িং হাউস গুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয়রা ফলে পোশাক কারখানাগুলো বায়ার পেতে তাদের কারখানায় মার্কেটিং এবং হিসাব বিভাগেও ভারতীয়দের নিয়োগ দেন গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টদের মতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা গুলোতে এক লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন অন্যদিকে বায়িং হাউজে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি এর বাইরে বাংলাদেশের আইটি খাতেও
ভারতীয়রা দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন এছাড়া আরো অনেক সেবা খাত এমনকি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম বিজ্ঞাপন কনসাল্টেন্সি ইত্যাদি খাতেও অসংখ্য ভারতীয় কর্মী রয়েছেন তাদের বেতনও অনেক বেশি সব মিলিয়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করেন বলে ধারণা করা হয় ফলে ভারতীয়দের কর্মসংস্থানেও বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য অবদান রয়েছে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে কর্মরত অধিকাংশ ভারতীয়রই কোন ওয়ার্ক পারমিট নেই তারা টুরিস্ট ভিসা কিংবা এ3 ভিসা বা বি ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন আর এসব ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের রোজগারের পুরো অর্থই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায় এদিকে ভারতের পর্যটন শিল্পকেও এক অর্থে বাঁচিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশী পর্যটকরা ভারতীয় সংবাদ
মাধ্যম দ্যা ইকোনমিক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতে যাওয়া বিদেশী পর্যটকদের প্রায় এক চতুর্থাংশই বাংলাদেশী পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর ভারতে 92 লাখ 30000 পর্যটকের সমাগম হয়েছে এতে দেশটির আয় হয়েছে 24707 কোটি রুপি এই পর্যটকদের মধ্যে শুধু শুধুমাত্র বাংলাদেশী পর্যটকই ছিল 225 শতাংশ কোন একক দেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যায় বাংলাদেশ থেকেই চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন এরপর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এখনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে এই অস্থিরতা ভারতের পর্যটন শিল্পে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে সাময়িকভাবে বাংলাদেশ ভারত ফ্লাইটে বিঘ্নিত হওয়ায় এবং মেডিকেল ভিসা বাদে বেশিরভাগ ভিসা
স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ভারতগামী বাংলাদেশীর সংখ্যা 90 শতাংশের বেশি কমে গেছে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ টুর অপারেটরস ওয়েস্ট বেঙ্গল চ্যাপ্টার জানিয়েছে এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতাল সংলগ্ন ট্রাভেল অপারেটর হোটেল গেস্ট হাউস গুলোর ব্যবসা 90 শতাংশ কমে গেছে টুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের একজন পরিচালক বলছেন এই পরিস্থিতিতে ভারত প্রতি মাসে 750 কোটি টাকা হারাচ্ছে যা ভারতের অর্থনীতির জন্য বিশাল একটি ধাক্কা যদিও পর্যটন খাতে বাংলাদেশীদের কাছ থেকে ভারত মাসে আনুমানিক 750 কোটি টাকা উপার্জন করে বলে মনে করা হয় কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে বেশি অর্থ বাংলাদেশীরা ভারতে খরচ করেন কারণ চিকিৎসার জন্য যেসব বাংলাদেশী ভারতে যান তারা সাধারণ টুরিস্টদের চেয়ে অনেক
বেশি অর্থ ব্যয় করেন ভারতের হেলথ টুরিজম ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী গত কয়েক বছরের মধ্যে টুরিজম ট্রাভেল 84 শতাংশ বেড়েছে 2021 সালের জরিপে দেখা গেছে বছরে 24 লাখ 70 হাজার মেডিকেল টুরিস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছেন শুধু বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষরা মেডিকেল টুরিজমে 5000 কোটি টাকার বেশি খরচ করে থাকেন এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য যথা ত্রিপুরা আসাম নাগাল্যান্ড মণিপুর অরুণাচল প্রদেশ মেঘালয় সিককিম ও মিজোরামের বাণিজ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও প্রবলভাবে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল গত বছর বাংলাদেশ সরকার ভারতের ত্রিপুরা ও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে চারটি পথ অনুমোদন করে এর ফলে ভারতের বৈধ যেকোনো পণ্যের চালান সমুদ্রপথে মংলা এবং চট্টগ্রাম
বন্দরে খালাস হচ্ছে এবং সেসব পণ্য বাংলাদেশের সড়ক পথ ও পরিবহন ব্যবহার করে চারটি স্থলবন্দর হয়ে ভারতে যাচ্ছে অথবা ভারত থেকে আসছে অতীতে প্রায় 1600 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এবং দীর্ঘ সময় ব্যয় করে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে পণ্য ন্যায় করা হতো মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো পণ্য পরিবহনের সময় এবং খরচ বহুলাংশেই কমে গেছে ভারতের বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রী রাধা দত্তের মতে মংলাবা চট্টগ্রাম বন্দরের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে পারলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যের চিত্র পুরোটাই পরিবর্তিত হয়ে যাবে তার উপর গত জুনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে ভারতীয় ট্রেন চলাচলের অনুমতি পেয়েছে
ভারত ফলে ভারতের অন্য সব রাজ্যগুলো সেভেন সিস্টারস এর সঙ্গে আরো সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে তরল গ্যাস পরিবহনেও বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল ভারত 2019 সালের 5 অক্টোবর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উভয় দেশের মধ্যে এক সমঝোতা হয় সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ত্রিপুরার ইন্ডিয়ান কর্পোরেশনে ওএনজিসির বিশালগড় বটলিং প্লান্টে ট্যাংকারের করে এলপিজি সরবরাহে সম্মত হয় এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন বাংলাদেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন ওমেরা বেক্সিমকো ও বিএম এনার্জি পেট্রোলিয়ামের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য এলপিজি আমদানি করতে শুরু করে অতীতে ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে শিলিগুড়ি পার হয়ে আগরতলায় তরল গ্যাস পরিবহনে
1640 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো কিন্তু বাংলাদেশের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এলপিজি সরবরাহ করতে মাত্র 250 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে যার ফলে ভারতের প্রচুর অর্থসা হচ্ছে এবং তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নও ত্বরান্বিত হচ্ছে সব মিলে এক কথায় বলা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতির উপর [মিউজিক] [মিউজিক] اللہ